Tuesday, December 1, 2015

ভারতে সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক


ভারতে সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বিতর্কআন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মুম্বাইতে একটি সিনেমা হলের ভেতর যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হচ্ছিল – তখন উঠে না দাঁড়ানোয় একটি মুসলিম পরিবারকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সিনেমা হলের অন্য দর্শকরা জাতীয় সঙ্গীতের সময় না দাড়ানোর করনে ওই পরিবারটিকে ঘিরে শাসন করতে থাকেন। তারপর পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তারা বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন তখন হলভর্তি দর্শক হাততালি দিয়ে ওঠে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এই গোটা ঘটনার ভিডিও পরে সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর রীতি চালু থাকলেও কেউ যদি না-ওঠেন তবে তার জন্য কোনও শাস্তির বিধান নেই। ঘটনাটি মুম্বইয়ের কুরলা অঞ্চলে বিলাসবহুল পিভিআর মাল্টিপ্লেক্সের ভেতরে ঘটেছে। চার সদস্যের একটি মুসলিম পরিবার ওই থিয়েটারে দেখতে এসেছিলেন সদ্য মুক্তি পাওয়া বলিউড ব্লকবাস্টার ‘তামাশা’। রাণবীর কাপুর ও দীপিকা পাডুকোনে অভিনীত ওই ছবিটি শুরু হওয়ার আগে হলে বাজানো হচ্ছিল ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণ মন অধিনায়ক’। আর তখন কোনও কারণে ওই পরিবারটি উঠে দাঁড়ায়নি। কিন্তু তার পরই তাদের ওপর যা শুরু হয়, সেটাও এক করুণ তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়! হলের বেশ কয়েকজন দর্শক উত্তেজিতভাবে ঘিরে ধরে তাদের কৈফিয়ত তলব করতে থাকেন। একজনকে স্পষ্ট থাপ্পড় মারার হুমকি দিতেও শোনা যায়। দু’চার মিনিট ধরে এই শাসানি চলার সময় ওই পরিবারটি বসে বসেই কিছু জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তবে তাদের কথা রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়নি। শেষে মাল্টিপ্লেক্সের কর্মীরাও এসে তাদের উঠে যেতে বললে চারজন হল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন। বাকি হলে থাকা অন্যরা একসঙ্গে করতালি দিয়ে ওঠে। এই ঘটনার ভিডিও ফেসবুক-ইউটিউবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পরই ওই পরিবারটির পক্ষে ও বিপক্ষে ভারতীয়রা কার্যত দু’ভাগ হয়ে গেছেন। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় সঙ্গীতের অমর্যাদা করার অধিকার কারও নেই। পাশাপাশি অনেকেই আবার যুক্তি দিচ্ছেন, তারা দাঁড়ান বা না-দাঁড়ান, হল থেকে তাদের বের করে দেওয়াটা কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। ভারতে অসহিষ্ণুতা নিয়ে এই মুহূর্তে যে বিতর্ক চলছে, তাতেও এই ঘটনাটা আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে। বিজেপি-র মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে না জেনে কোনও মন্তব্য করবেন না, তবে জাতীয় সঙ্গীতের যারা অবমাননা করেন তাদের ভারতে থাকারই অধিকার নেই। তবে ভারতের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় উঠে না দাঁড়ালে কোনও শাস্তির উল্লেখ নেই – যদিও আদালতের বিভিন্ন রায়ে নানা সময়ে বলা হয়েছে জাতীয় সঙ্গীতকে মর্যাদা দেওয়াটা নাগরিকদের নৈতিক কর্তব্য। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মীরা ভাটিয়া বলছিলেন এই ঘটনায় আসলে ‘দুটো অন্যায়’ হয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীতের সময় উঠে দাঁড়ানোটা খুব স্বাস্থ্যকর একটা প্রথা। কিন্তু যারা সেটা করেননি, তাদের যদি কেউ হেনস্থা করে বা শাসানি দেয়, সেটাও তো একটা অপরাধ। ইচ্ছেমতো আইনের ব্যাখ্যা করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকারও কিন্তু কারও নেই।’’ তবে মুম্বইয়ের পুলিশ জানিয়েছে, হেনস্থা হওয়া পরিবারটি বা হলের অন্য দর্শকদের কেউই তাদের কাছে কোনও অভিযোগ জানায়নি, ফলে তারা এর কোনও তদন্তও করছে না। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় উঠে দাঁড়ানোর বিষয়টি যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে, এই ঘটনায় তা আরও একবার প্রমাণ হল।-বিবিসি

মূলপাতা

সমগ্র বাংলাদেশ

এক্সক্লুসিভ